Monday, October 22, 2018

''বিশ কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।'' রবি ঠাকুর তুমি ঠিক বলেছিলে।

আজ আমার জীবনের একটি বিশেষ দিন। তা হয়তো অনেকের কাছে স্বাভাবিক আবার অনেকের কাছে হাসির আবার অনেকের কাছে লজ্জার। তবে আমার কাছে এইটা ছিল লজ্জার। এই দিনটির বর্ণনা কই থেকে শুরু করবো সঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা। তবে যাই হোক শুরু তো করতে হবে কেননা এই বিষয়টা সবার জানা দরকার।
তাহলে শুরু করি যতদূর মনে পড়ে,
আজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধ শুরু। তাই গত দিনে আসা ক্যান্ডিডেন্ট কে নিয়ে ভার্সিটি যাই। যখন সে পরিক্ষার হলে ঢুকলো তার কিচ্ছুক্ষন পরে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার ফোন বেজে উঠলো। আমি রিসিভ করা মাত্রই বিপরিত পাশ থেকে এক মহিলার আওয়াজ। আমি তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি জানান আমি যে ক্যন্ডিডেট কে সাহায্য করছি তার মা। আমি সালাম দিলাম এবং তাকে অতিব ভদ্র ভাবে জানালাম সে এখন পরিক্ষা দিচ্ছে। ওপাশ থেকে আমতা আমতা ভাবে আমাকে বলা হল “ বাবা তুমি তো রাজশাহীতেই থাকো। তোমার হয়তো অনেক পরিচিত আছে যারা প্রশ্নফাঁস করে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে। দেখতো বাবা এমন ভাবে আমার সন্তানকে একটু সাহায্য করতে পার কিনা”। আমি শোনা মাত্র অবাক হলাম, যে পৃথিবীতে এমনও মা আছে যে কিনা সন্তানের ভবিষ্যৎ এমন ভাবেই তৈরি করতে চান। সঙ্গে সঙ্গে আমি কর্কস ভাবে তার এমন আবদারের জবাব দিলাম। আপনি মেন্টালি সিক? আপনি আমাকে বলছেন প্রশ্নফাস করে আপনার সন্তানকে সাহায্য করতে? আপনার কি কোন কমন সেন্স নাই? আপনি এইটা কি ভাবে আমাকে বলতে পারলেন? আমার কথা ছিল সে দূর থেকে এসেছে তাকে আশ্রয় দেয়া ও তাকে পরিক্ষা হল পর্যন্ত পৌছে দেয়া আর আপনি আমাকে বলছেন তাকে অনৈতিক ভাবে পরিক্ষায় সাহায্য করতে? এরপর উনি আমাকে বিভিন্ন সংগঠনের এমন অপকান্ডের উদাহরণ দিয়ে বলছেন এইটা তুমি বাবা এইভাবে নিচ্ছো কেন? এইটা তো অনেকেই করে। আমি বললাম অনেকেই হতো করে কিন্তু আমি করিনা। সে যেমন পরিক্ষা দিবে সে তেমন ফল পাবে কিন্তু আমি এই ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারবোনা বলে ফোন রেখে দিলাম।
কিন্তু দিনভর আমি নিজের মধ্যে কেমন জানি একটা অস্তিত্বহীন অনুভব করছি। আর মাথার মধ্যে কয়েকটা প্রশ্ন বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। এইটা কি আমার দেশ? এই কি আমার শিক্ষা ব্যবস্থা? এই কি আমার সমাজ। তাই বেলা শেষে নিজে ধরে রাখতে পারলাম না। ডায়াল লিষ্ট থেকে ঐ নাম্বার টি খুজে বের করে ফোন দিলাম কিছু প্রশ্নের উত্তর নেয়ার জন্য। শুরুতে আমি আমার নাম বলে পরিচয় দিলাম। অতঃপর তার প্রোফেশন জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি জানালেন উনি তার এলাকার কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের একজন শিক্ষিকা। আমি এটা শুনেই অবাক একজন শিক্ষিকা তার সন্তান কে অবৈধ পথ অবলম্বনের উচ্চো শিক্ষা দিতে চান। আমি আবারও জিজ্ঞাসা করলাম যে তাকে কে এই বুদ্ধি বা পরামর্শ দিয়েছে যে আমাকে বললের প্রশ্নফাঁস বা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আমি তার সন্তানকে সাহায্য করবো। উনি তখন পুরা কথাটাই উল্টিয়ে দিলেন এবং আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন উনি এমনটা বলেন নাই। আমি পালটা প্রশ্ন করে বসলাম আপনি আমাকে যে কথা বলেছেন তা তাহলে মিথ্যা? উনি আমতা আমতা করে বলল দেখ বাবা এই দুর্নীতিবাজ সমাজে এতোটা সৎ থাকলে চলতে পারবেনা। আমি আবারো প্রশ্ন করলাম তার মানে কি আমাকে আপনি দুর্নীতিবাজ হইতে বলতেছেন নাকি আমাকে দুর্নীতিবাজ বলতেছেন? আর একটা কথা মনে রাখবে বাংলাদেশে সবাই যদি দুর্নীতিবাজ হইতো তবে বাংলাদেশ আজ বিক্রি হয়ে যেত। আমরা কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীরা এখনো সৎ আছি বলে বিগত দিন গুলোতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শিখেছি। আর আপনি একজন শিক্ষিকা হয়ে আপনার সন্তানের জন্য এই রকম অবৈধ কাজ করতে বলছেন সত্যি আপনার জন্য আমার অনেক গর্ব হচ্ছে। এমন শিক্ষিকা আমাদের প্রতিষ্ঠান গুলোতে আছে এইটা জেনে আমি গর্বিত। ভাল থাকবে এরপর থেকে কাউকে এমন আবদার জানানোর আগে একটু বুঝেশুনে করেন না হইলে সমস্যায় পরতে পারেন।
সাবাস বাংলাদেশ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
''বিশ কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।'' রবি ঠাকুর তুমি ঠিক বলেছিলে।